সঞ্চয় - অংশুমান ঘোষ

বিপত্নীক অশীতিপর আনোয়ার আলী সাতে পাঁচে থাকেন না। নিজের ছেলেপুলে নেই। সংসার, চাষবাস সব ভাইপোরাই সামলায়। বিড়ি খেতে খেতে দুবেলা সারা উঠোনে ঘুরে ঘুরে কি যেন খোঁজেন, আর টুক করে কুড়িয়ে নেন। রাস্তা দিয়ে যেতে যেতেও এই অভ্যাস আছে, কি সব কুড়িয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে লুঙ্গির গোঁজে লুকিয়ে ফেলেন। এটা নাকি তাঁর অনেক দিনের অভ্যাস। ঘরে বাইরে সবাই এই নিয়ে হাসাহাসি করে। মাঝে মাঝে নিজের ঘর বন্ধ করে খাটের নিচের বিশাল ট্রাঙ্ক টানাটানি করে কি যেন করেন। সেই সময়ে কেউ ডাকলেও দরজা খোলেন না, বিরক্ত হন। ট্রাঙ্কে কি আছে জিজ্ঞেস করলে বলেন, ‘আমি গোরে গেলে দেখিস’।
ট্রাঙ্কের রহস্য রহস্যই থেকে যায়, কেউ জানতে পারে না।
একদিন আনোয়ারের ইন্তেকাল হল। সব কাজকর্ম মিটে যাবার পর ভাইপোরা ঠিক করল বড় চাচার ট্রাঙ্কে যা যা আছে সবাই সমান ভাগে পাবে। বিস্তর খোঁজাখুঁজির পরে ট্রাঙ্কের তালার চাবিও পাওয়া গেল। বাড়ি সুদ্ধু সবাই হাঁ করে রইল ভেতরে কি আছে দেখার জন্য।
ট্রাঙ্ক খুলে দেখা গেল, আনোয়ারের সারা জীবনের বিচিত্র ‘সঞ্চয়’  
- ট্রাঙ্ক ভর্তি পোড়া দেশলাই কাঠি।