শেষ ট্রেন থেকে নেমে - অনিলেশ গোস্বামী

বৃষ্টিরাতের শেষ ট্রেন । সুনসান ষ্টেশনের বাইরে একটাই রিক্সা । উঠলাম। হঠাৎ একজন লোক আমাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই লাফিয়ে পাশে বসে পড়লো। গোটা শরীরটা চাদরে ঢাকা। চুপচাপ একদিকে কাৎ হয়ে রইলো । আমার গন্তব্য বলতেই রিক্সাচালক জায়গাটা বুঝলো । দরদাম করলাম না কারণ পরিস্থিতি অন্যরকম । আবছা আলো, সামান্য বৃষ্টি , নিঝুম রাতে চলমান রিক্সার একটানা শব্দ আর পাশে একজন চাদরমুড়ি দেওয়া নীরব মানুষ।
----  আপনি কি ঝাউতলাতেই থাকেন ?
চমকে উঠলাম । পাশের মানুষটির নীরবতা ভাঙলো । মুখ অবশ্যই অদৃশ্য । বললাম,
----  না
----  আত্মীয়ের বাড়ি ?
----  ঠিকই ধরেছেন । আপনিও কি...
----  না ।
সংক্ষিপ্ত দায়সারা জবাব দিয়ে চাদরটা খুলে ভালো করে মুখটা ঢাকলেন । একপলকে ওনার চাপদাড়ি আর গোঁফ দৃশ্যমান হলো ।
রিক্সা চলেছে তার নিজের ছন্দে । চালক অথবা প্যাসেঞ্জারদ্বয়ের কারোর তাড়া নেই । যান্ত্রিক কারণে ট্রেন লেট ।
----  কার বাড়ি যাবেন ?
নামটা বলতেই ভদ্রলোক নড়েচড়ে বসলেন । বললেন ,
----  আপনি ঠিক কীরকম আত্মীয় ?
----  ওখানে আমার এক মাসীমা থাকেন। মায়ের
       মাসতুতো বোন। ছেলে বাইরে , একাই
       থাকেন।
---- কেন ?
কৌতূহলে বিরক্ত হলাম।
----  আমার মেসোমশাই বছর দশেক হলো নিরুদ্দেশ।
----  স্বামী নিরুদ্দেশ কেন ?
বিরক্ত হলাম। বললাম,
----  এটা আপনার অনধিকার চর্চা।
কথা বলতে বলতে পৌঁছে গেলাম। নির্দিষ্ট বাড়ির সামনে রিক্সা থেকে নেমে বললাম,
----  আমিতো এখানেই নামবো। কিন্তু আপনি ?
 অস্ফুটে কী বললেন বুঝলাম না । চাদরটা মুখ থেকে একটু সরিয়ে উনিও নেমে দাঁড়ালেন।
কলিং বেল বাজাতেই মাসীমা দরজা খুলে সহাস্যে,
----  আয় , ভেতরে আয়। এতদিনে মাসীমাকে
       মনে পড়লো ?
একটু পেছনেই আমার অচেনা সহযাত্রী । মাসীমা জিজ্ঞেস করলেন ,
----  তোর সঙ্গে আর কেউ আছে ?
খোলা দরজা দিয়ে একঝলক আলো অচেনা লোকটির মুখের ওপর পড়েছিলো । এগিয়ে এসে মাসীমা লোকটিকে আপাদমস্তক দেখতে
দেখতে কিছুক্ষণ পরে বিকট চিৎকার করে উঠলেন,
----  কে, কে, কে তুমি ?  বলো কে তুমি ?