কথার কথা
বাংলাদেশ গিয়েছিলাম ১৯৯৩ সালে। ছ জনের একটা টিম। প্রথমে ফরিদপুর। কয়েকদিন কাটিয়ে চলে গিয়েছিলাম ঢাকাতে। অনেক স্মৃতি। অনেক আতিথেয়তা। মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। একটা বেসরকারি সাংস্কৃতিক সফর। অনেক গুলো অনুষ্ঠান হয়ে ছিল। ফরিদপুরের রমনা ময়দানে অনুষ্ঠানের কথা আজও মনে আছে। প্রচুর মানুষ এসেছিলেন। আমাদের সাথে স্থানীয় শিল্পীরাও অংশগ্রহণ করেছিলেন। সঞ্চালক আলাপ করিয়ে দিচ্ছিলেন এই পরিচয়ে , এনারা ভারত থেকে এসেছেন। সংগীত আবৃত্তি পরিবেশন করবেন। মনটা আনন্দে ভরে উঠল। যেমন তেমন পরিবেশন করলে হবে না। সেরাটা দিতে হবে। বেসরকারি হলেও আমি তো দেশের প্রতিনিধিত্ব করছি। আমার দেশ ভারতবর্ষ। যেখানেই গেছি সেখানেই আমার পরিচয় আমি ভারতবর্ষের মানুষ। হাজারো ব্যর্থতা হাজারো না পারা নিয়ে আমার দেশ সকল দেশের সেরা। এই ভালোবাসা, এই গর্বে কখনো চিড় ধরে নি।
আজ এই দুঃসময়ে আশায় আশায় থাকি আমার দেশ পারবে সব সংকটের মোকাবিলা করতে। নিশ্চয় পারবে। দেশের প্রত্যেক মানুষ হাতে হাত ধরে সবার হাসি ফিরিয়ে দিতে পারবেই। কিন্তু এই বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে কোথাও কি বিপন্ন বোধ করছি?
জীবন এবং জীবিকার টানে দেশের মানুষ এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাবেন এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। মেধা মননের সাথে শ্রম যুক্ত হয়ে দেশ সেজে উঠবে এতেও তো আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই। কত মানুষ নিজের জায়গা ছেড়ে পরিবার পরিজন ছেড়ে অন্য প্রান্তে রাস্তা ব্রিজ বাঁধ বাড়ি ঘর তৈরি ছাড়াও আরো কত কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তাদের পরিশ্রমে সেজে ওঠে সেই অঞ্চল। আমরা আনন্দিত হই। কিন্তু তাদের পরিশ্রমের মূল্য দিই না। এতই কৃপণ কি আমার দেশ! দেশের কাছে এই মানুষ গুলো তো অচ্ছুৎ হতে পারে না। বিপদের দিনে আমার প্রিয় দেশের মানবিক মুখ ফিকে হয়ে যায় কি করে? বিস্মিত হই! দাঁড়াই প্রশ্নের মুখোমুখি এই সব সহনাগরিক কে পরিযায়ী আখ্যা দিয়ে বিপন্নতার দিকে ফেলে দিয়ে সুখী সমৃদ্ধশালী ভারত সম্ভব ? বাড়ি ফেরার টানে হাজার হাজার মাইল পথ পেরোনোর যে ইতিহাস তারা রচনা করলেন তা আমাদের মাথা কি হেঁট করিয়ে দেয় না ? আমরা কি ভুলে যেতে পারি ভারত আমার যতটা আপনার যতটা ঠিক ততটা ওদেরও যাদের পরিযায়ী শ্রমিক আখ্যা দিয়ে মূল স্রোত থেকে সরিয়ে দেওয়ার একটা অপচেষ্টা। জল নেই খাবার নেই বাড়ি ফেরার পর্যাপ্ত বাস নেই ট্রেন নেই । তাহলে কি পরিকল্পনায় বড়সর গলদ রয়ে গিয়েছিল। ভাবতে ভাবতে কেমন বিমর্ষ লাগে।
এ আমার কোন ভারতবর্ষ!
দেখতে দেখতে পঞ্চম সংখ্যা। এবারও নিবন্ধ যেমন রয়েছে তেমনি রয়েছে বেশ কয়েকটি গল্প। আর কবিতা। আশা করি এবারের সংখ্যাটিও আপনাদের ভালো লাগবে।
ভালো থাকুন।
গৌতম দাশ
সম্পাদক : গৌতম দাশ
সম্পাদনা সহযোগী : মলয় রক্ষিত
উপদেষ্টা মন্ডলী
ডা. গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায়, বিশ্বনাথ লাহা, শর্মিষ্ঠা নাথ, বিজয় দত্ত, ডা. ভাস্কর দাস, সিদ্ধার্থ ভট্টাচার্য, অরণি বসু, সুশীল নাগ, কুণাল চট্টোপাধ্যায়, অমর নাথ, রক্ষিত লিলি হালদার, অঞ্জনা ঘোষ, রামকিশোর ভট্টাচার্য, আশিস সরকার, অপূর্ব কৃষ্ণ দত্ত, বোধিসত্ত্ব বন্দ্যোপাধ্যায়, পল্লব বরন পাল, রবীন বন্দ্যোপাধ্যায়, আনন্দ দাশগুপ্ত, গায়ত্রী রায়, স্বপন বিশ্বাস, সুভাষ ভদ্র, সৌম্যশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়।
বিশেষ সহায়তা
নিরুপম আচার্য, রুদ্র কিংশুক, আইভি চট্টোপাধ্যায়, শ্রেয়া ঘোষ, বিদিশা সরকার, মণিদীপা নন্দী, বিশ্বাস নিবেদিত, আচার্য স্নিগ্ধা চন্দ্র, আলো পাল, গৌতম সাহা, বোধিসত্ত্ব ভট্টাচার্য, পম্পা দেব, অনমিত্র রায়, সৌরভ হাওলাদার, মানস শেঠ, রিমি মুৎসুদ্দি, দেবাশিষ ভট্টাচার্য, অংশুমান ঘোষ, রিপন রায়, তন্ময় মালাকার, দেবাশীষ সরকার।
কলকাতা যোগাযোগ ও লেখা পাঠানোর ঠিকানা
পরম্পরা প্রকাশন