দৌত্য খুব সহজ কাজ নয়। বিশেষ করে যারা অন্যায় করার পরও কোনও অনুতাপ করে না, তাদের কাছে দূতের কোনও সম্মান থাকে না।
রামায়নে রাবণের রাজ সভায় রামের দূত হিসেবে গিয়েও সম্মানিত হন নি অঙ্গদ। কারণ দূতকে সম্মান করার জন্য যে নিষ্ঠা ও মেধা প্রয়োজন, তা রাবনের রাজ সভায় বিভীষণ ছাড়া কারোর ছিল না।
আর যুদ্ধং দেহি মনোভাব যদি গ্রাস করে অসুরদের, তবে তারা কোনো দৌত্য বা কোনও সতপরামর্শের ধার ধারে না।
দেবাদিদেব মহাদেব শিব একবার দৌত্য করেছিলেন। শিবকে দেবী ভগবতী দূত হিসেবে প্রেরণ করেছিলেন বলে পুজনীয় দেবীর ভক্তমাঝারে নাম হলো শিবদূতী।
পুরাণ কাহিনি অনুসারে, একবার শুম্ভ-নিশুম্ভ সমেত অসুরদের এক বিশাল জমায়েত হয়েছিল, স্বর্গলোক দখল নেওয়ার জন্য। ইতি মধ্যেই তারা দেবরাজ ইন্দ্র ও অন্য দেবতাদের পরাস্ত করেছে। তটস্থ দেবতারা দেবীর শরণাপণ্ন হয়েছে।
শ্রীশ্রী চণ্ডীর ব্যাখ্যায় অনন্তর দেবীর শরীর থেকে অসংখ্য শৃগালের মতো ডাকের, এক ভীষণ দর্শনা দেবী আবির্ভূত হলেন। শ্রীশ্রীচন্ডীরজ অষ্টম অধ্যায়ে ২৩-২৮ শ্লোক অনুযায়ী, দেবী আবির্ভূত হয়েই মহাদেব শিবকে আহ্বান করলেন অসুরদের মাঝে দৌত্যে। দেবীর বার্তাটি ছিল স্পষ্ট।
যুদ্ধে আগ্রাসী অসুরেরা যেন এখুনি পাতালে নিজভূমে প্রবেশ করে। নতুবা তারা শৃগালের খাসদ্যে পরিণত হবে।
মহাদেবকে দেবী জানালেন, দেবরাজ ইন্দ্র তাঁর সিংহাসন-এ অধিষ্ঠিত হবেন। দেবতারা যাগ যজ্ঞে যেমন থাকেন, তেমনই থাকবেন। যুদ্ধ করে অসুরেরা নিজেদের ক্ষতি ডেকে আনছে মাত্র।
মহাদেব শিব গিয়েছিলেন দেবীর দূত হিসাবে।
কিন্তু তাঁর প্রয়াস সফল হয় নি। অসুরেরা মহাদেব শিবের দৌত্যে কোনও সাড়া দেয় নি।
অগত্যা দেবী বিশেষ কৌশলে অসুর নাশ করতে থাকেন।
চন্ডীতে লিখিত রয়েছে যে, প্রথম দিকে শুধুমাত্র বিকট শৃগালের ডাক ও প্রবল অট্টহাস্যে দেবী যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। দীর্ঘ সময় ধরে যুদ্ধ অভিলাষী অসুরেরা দেবীর এমত মূর্তি দেখে হতভম্ব। শুধুই শৃগালের ডাকের মারাত্মক হুংকারে অসুরেরা মুর্চ্ছা যেতে শুরু করে।
আর করাল্বদনা তিনি অসুর-মাংসে উদর পূর্তি করতে থাকেন।
কিন্তু মহাদেবকে দূত হিসেবে নিয়োগের জন্য দেবীর এই মূর্তির নাম হয় শিবদূতী।
শিবদূতী রননৃত্য ও হুংকারে দানব ও অসুর নিধন হয়। আরো একবার রক্ষা পায় দেবলোক।