শিবলিঙ্গে ডাবের জল বা দুধ কেন ঢালা হয় – একটি পৌরাণিক ব্যাখ্যা

শিব ভক্ত মানুষের এক পরম চাওয়া পাওয়া যেন মুক্তি পায়, শিবলিঙ্গে জল বা দুধ দিয়ে স্নানের পর।
হিন্দু ধর্মের মাহাত্ম্য এই যে, আমাদের যে কোনও ধর্মীয় আচরণের ভারী চমৎকার ব্যাখ্যা আছে। আছে কার্য কারণ। সর্বোপরি রয়েছে পরম্পরা। যুগ যুগ ধরে এই রীতি নীতি বিশ্বাস ও মর্যাদার সঙ্গে পালন করা হয়।
শিবলিঙ্গে জল বা দুধ ঢালা যেমন এক পরম্পরা।
এক প্রগাঢ় বিশ্বাস বোধ থেকেই এই শিবলিঙ্গ স্নান তথা পূজা করা হয়।
সমুদ্র মন্থনের পর উঠে এসেছিল অমৃত ও গরল তথা মারাত্মক বিষ।
অমৃতের ভাগাভাগী নিয়ে দৈত্যদের সঙ্গে দেবতাদের লড়াই – সে প্রসঙ্গ ভিন্ন। এখানে গরল তথা বিষের কথা বলা যাক।
ওই গরল বা মারাত্মক বিষের অন্য নাম হলাহল।
সমস্যা উপস্থিত হলো ওই হলাহল নিয়ে। ওই বিষ চরাচরে কোনও মতে ছড়িয়ে যাতে না পড়ে – দেবতারা ভয়ানক চিন্তায় পড়ে গেলেন প্রথমে। হলাহল জগতের যেখানে পড়বে, ধরিত্রী সেখানেই বিপন্ন ও সমাপ্ত হবে।
এই হলাহল বিনষ্ট করার কোনও উপায়ও নেই। তেমন শক্তিও নেই – যে এই ভয়ংকর বিষ নষ্ট করে দিতে পারে।
মাত্র একজন পারেন নীলকণ্ঠ হতে। একজনই পারেন ধরিত্রীকে সমূহ এই বিপদ থেকে রক্ষা করতে।
বলা বাহুল্য, তিনি দেবাদিদেব মহাদেব শিব।
শিব নিজ শরীরে চিরকালের জন্য ধারণ করে নিলেন ওই জগত-ধ্বংসকারী অতীব ক্ষমতা সম্পন্ন গরলকে।
নিলেন নিজের গলায়। কণ্ঠে। তাই তিনি নীল কণ্ঠ।
এরপর উপস্থিত হলো অন্য সমস্যা। ভগবান নারায়নের পরামর্শে বিষপান তো হলো। জগত বিপদ্মুক্ত হলো।
কিন্তু এই প্রকৃতি-জাত গরলের অসীম প্রভাব। মারাত্মক শক্তি। জগতের শ্রেষ্ঠ শক্তিকেও যার প্রভাবে অস্থির করে তুলল।
মহাদেব শিব বিষপানের পর তার শক্তিতে কিঞ্চিৎ উত্যক্ত হলেন। অস্থির হলেন গরলের অন্তর্নিহিত তাপ ও শক্তিতে।
অগত্যা দেবতারা এগিয়ে এলেন মরিয়া হয়ে। মহাদেবের জন্য তারা গঙ্গা অভিষেক করলেন আপন আপন শক্তিতে।
এই অভিষেকই হলো শিবলিঙ্গে জল বা দুধের স্নান। এই ধারাস্নানে মহাদেবের মন প্রসন হলো। গরলের মাত্রাতিরিক্ত প্রভাব স্তিমিত হয়ে পড়লো।
শিবের যারা উপাসক, তারা শিবলিঙ্গে জল বা দুধ ঢেলে বস্তুত যে অভিষেক করেন, তাতে প্রকাশ পায় মহাদেবের প্রতি তাদের অসীম ভক্তি, প্রবল অনুরাগ। তিনিই অমৃত, তিনিই গরলের ধারণ কর্তা। তিনিই আদি, তিনিই অন্ত। বস্তুত তিনিই অনন্ত।
সর্বদা শিবের কণ্ঠ, ও জটায় বেষ্টন করে থাকা নাগ তথা সর্প জাতির এক অসামান্য কাহিনি রয়েছে এই কাহিনির মধ্যে।
গরলের প্রভাবে উত্যক্ত, উত্তপ্ত ও অস্থির মহাদের ভার তার পরম প্রিয় ভক্ত নাগ জাতিও কিছুটা বহন করতে এগিয়ে এসেছিল। প্রাণী জগতে একমাত্র তারাই বিনীত ভাবে মহাদেবের বিষের ভার লাঘব করতে এগিয়ে এসে অনেকটা বিষ নিজেদের দাঁতের ভিতরে নিয়েছিল।
বেশ কিছু নাগ তথা সাপ এই কারণেই বিষধর। তাদের দংশনে উতক্ষেপিত হয় যে গরল, তা এই কারণেই প্রানঘাতী।