কুমারি পুজো

সবচেয়ে জনপ্রিয় অসুরের নাম লিখ। ( এখানে জনপ্রিয় মানে প্রিয় জন নয় - সব থেকে প্রচারিত নাম - কুখ্যাতি বা অখ্যাতি - যাইই হোক)
এমন প্রশ্ন পত্র এলে আমরা সম্ভবত চোখ বুঁজে যে অসুরের নাম লিখবো, সেই অসুর  গোটা বিশ্বের সমস্ত বাঙালি পুজো প্যান্ডেলে মা দুর্গার পায়ের নীচে অবস্থান করেন। তার শরীরের অর্ধেক মুন্ডু কাটা এক মহিষের পেটের ভিতর।
অর্থাৎ সে মহিষাসুর।
অথচ এই দুর্গাপুজোয় একটি অত্যন্ত অনাবিল, শান্ত স্নিগ্ধ এক অনুষ্ঠানের সঙ্গেও এক ভয়ানক অসুরের নাম জুড়ে আছে।
অনুষ্ঠানের নাম – কুমারি পুজো।
আর অসুরের নাম কোলাসুর।
কোলাসুর – সন্ধি বিচ্ছেদ করলে হয় কোল যুক্ত অসুর। কিন্তু এই অসুর কারো জন্য কোল পেতে দেয় নি।
বরং ভগবানের আশীর্বাদ ও বর হাতিয়ে নিয়ে সে অধিকার করে নেয় স্বর্গ ও মর্ত্য।
অতঃকিম?
দেবতারা মহাকালীর শরণাপন্ন হলেন।
এবং মা কালী পুনর্জন্ম নিলেন কুমারি হিসেবে। তার হাতেই বধ হলো অমিত বিক্রম কোলাসুর।
অতঃপর পুরাণ গাথায় সৃষ্টি হলো কুমারি পুজো। মা দুর্গার পুজোর অষ্টমী ( কোথাও কোথাও নবমী) তিথিতে হয় এই কুমারি পুজো।
এই অনাবিল, ভীষণ সুন্দর পুজোর সবচেয়ে সুন্দর দিক হলো, কোনো সত্যি মানব শিশু কন্যাকে ঈশ্বরজ্ঞানে পুজো করা হয়।
তুলতুলে গাল, ছোট্ট ছোট্ট হাত পা, মুখে ভুবনভোলানো হাসি – একটি মানব শিশু কন্যাকে শাড়ি পরিয়ে কপালে চন্দনের টিপ দিয়ে মা-জ্ঞানে বরণ করা হয়।
সে এক সত্যিই দেখার মতো – অনুভব করার মতো – প্রণাম করার মতো দৃশ্য।
১ থেকে ১৬ বছর বয়স পর্যন্ত অরজঃস্বলা কন্যের পুজো করেন আবালবৃদ্ধবণিতা। সেই কন্যে সবাইকে আশীর্বাদ করে।
এই কন্যা নির্বাচনে কোনও জাতি ভেদ বর্ণ ভেদ করা হয় না। দেবীজ্ঞানে যে কোনও কুমারিই পুজো পায়।
কুমারি পুজো নিয়ে একটি তথ্য এই যে, বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া পুজোর এই রীতি ১৯০১ সালে ফিরিয়ে আনেন স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দ। বেলুড়মঠের সে পুজোয় উপস্থিত ছিলেন সর্বজনের মা সারদাময়ী।
এই যে এক থেকে ষোলো বছর বয়স পর্যন্ত কুমারি পুজো, এতে প্রতিটি বছরের কুমারির আলাদা করে নাম আছে। ওই নামেই ওই কন্যে পুজো পায়।
১ সভ্যা ২ সরস্বতী ৩ ত্রিধমূর্তি ৪ কালিকা ৫ সুঙ্গা ৬ উমা ৭ মাতঙ্গিনী ৮ কুষ্টিকা ৯ কাল সন্দভা ১০ অপরাজিতা ১১ রুদ্রাণী ১২ ভৈরবী ১৩ মহালক্ষ্মী ১৪ পঠনায়িকা ১৫ ক্ষেত্র ১৬ অন্নদা বা অম্বিকা।