পক্ষীরাজের ঘোড়া

যুদ্ধে আমায় যেতেই হবে ভয় কোরো না কোনো 

এখন তুমি কেঁদো নাক লক্ষীটি মা, শোনো- 

পক্ষীরাজের ঘোড়ায় চড়ে 

যাচ্ছি আমি অনেক দূরে 

টগবগিয়ে সাদা ঘোড়ায় রূপকথারই দেশে। 

মেঘেরাও সব যাচ্ছে উড়ে আমার পাশে পাশে।

 

কোমরেতে-গোঁজা আছে তরোয়াল স্কন্ধে ধনুক-তীর 

দুই হাতে ধরা ঘোড়ার লাগাম উন্নত মোর শির 

মহা মহা অসুরদেরে 

বধ করতে স্বর্গপারে 

যাচ্ছি উড়ে করতে দেখা দেবতাদের সনে, 

সঙ্গে তাদের আমিও নেব অংশ মহারণে।

 

দেবতাদের হারিয়ে অসুর বসল সিংহাসনে 

দেবতারা লুকায়ে এখন নীল আকাশের কোণে 

করল শেষে আমায় স্মরণ 

বলল এখন বাঁচন-মরণ 

করছে খোকা নির্ভর সব তোমার ওপরে, 

স্বর্গ মোদের পুনরুদ্ধার কর এবারে।

 

অসুরদের এ-অন্যায় মা আর কি কখনও 

সহ্য আমার হয় এ-বুকে, রাত্রি সঘন 

হইলে পরে আচম্বিতে 

দেবতাদের সামনেটিতে 

ছুটিয়ে ঘোড়া ঢুকতে গিয়ে সিংহদুয়ার পরে,

একটা অসুর এল আমায় গিলতে যে হাঁ করে।

 

বিরাট সে তার চেহারা-যেমন হাঁ-টাও তেমন বড় 

বড়-বড় চোখ আগুনের গোলা, ঠোঁটের দুপাশে আরও

বিরাট লম্বা দাঁত বার করে

গিলে খেতে সে যে এল আমাদেরে 

তুণের থেকে তীর বার করে ধনুকে লাগিয়ে আমি 

ধনুকেতে দিয়ে টঙ্কার, তীর ছুঁড়তে যে উদ্যমী।

 

এমন সময় অভাগা আমার ভীতু সেই সাদা ঘোড়া 

সামনের দু-পা উঠিয়ে দাঁড়ায়, দিয়ে ওঠে গা ঝাড়া

ভয়ঙ্কর সে অসুরকে দেখে

চিঁহি চিহি স্বরে উঠল যে ডেকে 

তার পিঠ হতে অতল গভীরে পড়িনু নির্ণিমেষে, 

ভাগ্যিস মাগো, শুয়ে তুমি ছিলে আমার নিয়র ঘেঁষে।।