কৃত্তিবাসী রামায়ণ

আজিকার বর্ষামুখর মধ্যাহ্নে, 

সুর করে পড়া গেল কৃত্তিবাসী রামায়ণ। 

চিত্রকূট পর্বতে রাম অপরাহ্নে, 

তখন আমার একান্ত আপনজন।

 

এমনই কোনও এক বাদল দিবসে, 

নাসারন্ধ্রে বাল্মীক-সুবাস, 

আদিরস মহাকাব্য রচিলা কি হরষে, 

মহাকবি তুমি কৃত্তিবাস।

 

ভাবিতেছি কবিবর, 

লক্ষণ রেখার পর, 

রাবণ যবে সীতারে হরিল। 

শূণ্য পথে ওড়ে রথ, রুধিয়া তাহার পথ, 

জটায়ু রামেরে স্মরিল।

 

মরিবার পূর্বে সীতার, 

রামেরে দিয়া খবর, 

জটায়ু গেলা স্বর্গধামে। 

সে সকল অপরূপে, করিলে বর্ণনা চুপে, 

পর্বতারণ্যের দক্ষিণে-বামে।

 

মধ্য রাত্রে যখন রাম সীতা অন্বেষণে, 

পর্বতারণ্যে উঠাইয়া সোরগোল। 

ভক্তবীর হনুমান লঙ্কারে দহনে, 

আছড়াইয়া লাঙ্গুল-অনল।

 

প্রণাম তোমায় কবি, 

আঁকিয়াছ যে ছবি 

দোয়াত কালির আঁচড়ে, 

তুলনা নাহিকো তার, 

তুলনা মেলাও ভার 

বাংলা সাহিত্যের পাঁজরে।

 

সীতা উদ্ধার হেতু, সাগরে বাঁধিয়া সেতু, 

বানর সেনা অঙ্গদ, নীল। 

লঙ্কাপুরী মহাধাম, ঘেরিল সকল রাম, 

উত্তরিয়া সাগর সুনীল।

 

সহযোগী বিভীষণ, অতঃপর আক্রমণ, 

শুরু হইল মহারণ। 

ইন্দ্রজিৎ, কুম্ভকর্ণ, সকল বীরের দর্পচূর্ণ, 

অবশেষে বধ হইল রাবণ।

 

মরিবার পূর্বে বীর, কাঁপা ঠোঁটে তিরতির, 

রামনাম করিয়া কহিল- 

তোমা হেরিবারে সাধ, গনিলাম পরমাদ, 

ভক্ত তব রূপ হেরি মরিল।

 

বাল্মিকী বিরচিলা যে রামায়ণ তারে, 

দিলে তুমি প্রাণ সুরদাস। 

রচিয়া বাংলা ভাষে, আদি মহাকাব্য রসে, 

অমর হইলে কৃত্তিবাস।।