বোড়ো জনজাতি প্রসঙ্গ - আশীষ বাগলারি

আমরা সাধারণ মানুষ গ্রামে গঞ্জে সারাদিন খাটুনির পর আনন্দের সাথে বেঁচে থাকতেই ভালবাসি। রোগব্যাধি অতো বড় বড় শব্দকে আমরা অতিসাধারণ বলে উড়িয়ে দিই। যদিও এতো প্রত্যন্ত এলাকায় চিকিৎসা ব্যবস্থার খুবই উন্নত যে হয়েছে, একথাটা এখনো জোর দিয়ে বলা উচিৎ হবে না। তাছাড়া চিকিৎসার জন্য আমাদের এই প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আর্থিক দিক দিয়ে তো বটেই মানসিক দিক দিয়েও অনেকেই যেতে সাহস করে উঠতে পারে না। অতএব একটাই উপায় থেকে যায় তা'হল গ্রাম্য কবিরাজ বা ওঝা। যুগ যুগ ধরে এদের উপরেই আমরা নির্ভরশীল যে কোন চিকিৎসার ক্ষেত্রে।   
প্রাচীনকালে নানা সময়ে নানান ধরণের রোগব্যাধি মহামারী দেখা দিত। লক্ষ লক্ষ জনসাধারণ মারা যেত, গ্রামের পর গ্রাম ধ্বংস হয়ে যেত। তখনকার সময়ে ডাক্তার, হাসপাতাল এগুলো ছিল না। ছিল শুধু কবিরাজ আর ওঝা। তারাই নানারকম শেকড়, পাতা অবলম্বন করে ওষুধ বানিয়ে মানুষের রোগব্যাধি দূর করার চেষ্টা করত। উপকৃত অবশ্যই হত — তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কুসংস্কার পদ্ধতিও অবলম্বন করা হত। সত্যি কথা বলতে গেলে আজও এই সংস্কারই বলুন আর কুসংস্কার বলুন গ্রামের মানুষ বা শহরের মানুষ হোক কিছু না কিছু  কুসংস্কার অবলম্বন করে থাকেন। 
একবিংশ শতাব্দীতে পৌঁছে অন্যান্য সকল জাতির মতই বোড়ো সমাজও অনেকটাই আধুনিক মনস্ক হয়েছে। তারা ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, আমলা, মন্ত্রী, নেতা, নেত্রী, শিক্ষক, ব্যবসা-বাণিজ্য ইত্যাদি সকল কর্মের সাথেই যুক্ত হয়ে জীবনযাপন করছে। এর পাশাপাশি যারা গ্রামের খেটে খাওয়া বোড়ো সমাজ, তাঁরা কিন্তু নিজেদের সংস্কৃতি, নিজস্ব ওষুধ বা শেকড়, পাতা, বাকল ইত্যাদির উপরই আজও নির্ভরশীল। 
অতীতকালে বোড়োরাও অনেক মহামারী দেখে এসেছে এবং লড়াই করে জীবনযুদ্ধে জয়ী হয়ে আজ পর্যন্ত টিকে আছে। উত্তরপূর্ব ভারত এমন একটি অঞ্চল যে প্রাচীনকাল থেকেই এর পরিবেশ স্বাপদসঙ্কুলে আবর্তিত। এই ভূপ্রকৃতি স্যাঁতস্যাতে, অতিভারী বৃষ্টিতে হরপা বানের ফলে ভূমিধ্বস-এর সমস্যা। স্যাঁতস্যাঁতে ভূপ্রকৃতির কারণে ম্যালেরিয়ার সমস্যা, কলেরা মহামারী, প্লেগ, বসন্ত ইত্যাদি নানান সমস্যায় সম্মুখীন।         আমার মা বলতো এই কলেরাতেই নাকি আমার একমাত্র পিসী মারা গেছেন।  মেজোমামা মারা গিয়েছেন বসন্ত রোগে। 
বোড়োরা প্রাচীন কাল থেকেই সমাজবদ্ধ জাতি। এদের যিনি দলপতি তার কথা অনুসারেই এই জাতি এগিয়ে যেত। বর্তমানকালে দলপতি বা সর্দার না থাকলেও সমাজের যে বয়স্ক বা বুদ্ধিজীবি ব্যক্তিরা আছেন তাঁদের কথামতোই এই সমাজ চলে থাকে। বয়স্ক ব্যক্তি রোজা বা ওঝা হতে পারে, হতে পারে সমাজের কোন বুদ্ধিজীবি লোক।
এখানে কারোর যদি কোন অসুখ করে থাকে তবে তাকে বা তার পরিবারের সদস্যদের নানা রকম ওষুধ বলে দেন। তাঁরা সেইমত নানারকম গ্রাম্য ওষুধ ব্যবহার করে থাকেন। এতে সকলেই যে ঠিক হয়ে যায় তা নয়। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় রোগ নিরাময় হয় না। তখন তিনিই নির্দেশ দেন চিকিৎসালয়ে যাবার জন্য। তবে এটাও সত্য যে আজকাল যাঁরা একটু শিক্ষিত হয়ে উঠেছেন বা যাঁরা শহরাঞ্চলে থাকেন তাঁরা কিন্তু প্রাথমিক চিকিৎসার হাসপাতালেই ছোটেন। ওঝা বা রোজার কাছে যান না। 
আমি নিজেও ছেলেবেলা থেকে দেখে আসছি সাধারণ জ্বর বা সর্দিকাশি হলে প্রাথমিক চিকিৎসা ঘরোয়া পদ্ধতিতেই করতেন। 'চোখ্খা মূল' বলে একরকম ওষুধ তৈরী করা হত। সেটিই সেবন করানো হত। আশ্চর্যজনকভাবে ফলেও যেত। আবার আমাদের গ্রামে যখন কারও 'হাম' হত তখন বাঁশের যে কচিপাতা রয়েছে সেটা ফুটিয়ে সেই জল খাওয়ানো হত। তাতে করে যত জীবাণু রয়েছে তাকে বের করে দিতে সাহায্য করে বলে মনে করা হত। উপরন্তু আর কোনও দিন 'হাম' হওয়ার সম্ভাবনা নেই বলা হত। আবার আমার যখন বসন্ত রোগ হয়েছিল তখন আমাকে শুকরের মাংস খেতে দেওয়া হয়েছিল। আমি তো শুনে অবাক, কেননা ওই একই সময়ে আমার বন্ধুবান্ধবদেরও বসন্ত হয়েছিল। তারা তো অনেক নিয়ম কানুন মেনেছিল। মাছ মাংস তো দূরের কথা নিরামিষ খেতে গেলেও অনেক বাছাবাছি করে খেতে হয়েছিল। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে ঠিক উল্টো। কিন্তু সত্যি বলছি আমার কয়েকজন বন্ধুর পুনরায় এই বসন্ত রোগ ভয়ঙ্কর ভাবে দেখা দিলেও আজ পর্যন্ত আমার আর হয়নি। জানিনা এর কিছু যুক্তি আছে কিনা। কিন্তু গ্রাম্য ওষুধপত্রের কোন না কোন কিছু উপকারিতা হয়তো থাকলেও থাকতে পারে। এরকম বহু গ্রাম্য ওষুধ আছে যা কবিরাজ বা ওঝাগণ আমাদের বলে দিয়ে থাকেন। তবে তারা ওষুধে কি কি শেকড় বাকর মেশান তা বলতে চাননা। হয়তো এতে কোন বাধা রয়েছে। উপরিউক্ত ছোটখাটো রোগ কবিরাজ বা রোজার মাধ্যমে ঠিক হলেও নানা প্রকার কঠিন রোগের অধিকাংশ ক্ষেত্রে সফল হওয়া খুবই শক্ত। যেমন বিভিন্ন মহামারী। সঙ্গত কারণেই নাম এসে যায় ২০১৯ থেকে শুরু হওয়া ভয়ঙ্কর মহামারী COVID-19 -এর নাম। 
বোড়ো সমাজ ও করোনা মহামারী ঃ
প্রত্যেক মানুষই জীবন যুদ্ধে লড়াই করে বেঁচে থাকে কেউ জয়ী হয় কেউবা হেরে যায়। প্রতিনিয়ত একে সংগ্রাম করে চলতে হয় এর নামই তো জীবন। যতদূর মনে পড়ছে ২০২০-র জানুয়ারী মাসে সংবাদ মাধ্যমের দ্বারা প্রথম জানতে পারি চীনের উহান শহরে প্রথম COVID-19 -এর সূত্রপাত। এই রোগ সম্বন্ধে জানতে পেরে খুবই আতঙ্কিত হই। কেননা এই রোগের বংশবৃদ্ধি হয় একমাত্র রোগগ্রস্থ কোন মানুষের সান্নিধ্যে এলে বা তার শ্বাস-প্রশ্বাসের মাধ্যমে। তবে কিছুটা স্বস্তিতে ছিলাম কেননা, কোথায় সেই চীনদেশ আর কোথায় ভারত। সাধারণ প্রতিদিনকার খবর বলে এড়িয়ে গিয়েছিলাম। তাছাড়া, যারা একটু আধটু সংবাদপত্র বা টি.ভিতে খবর-টবর দেখে তারাই এই COVID-19 সম্বন্ধে কিছুটা জেনেছিল। বোড়ো সমাজের অধিকাংশ মানুষই জানতে পারেনি চীন দেশের প্রত্যন্ত শহর উহান থেকে আমাদের দেশেও এই ভয়ঙ্কর বিপদটি আসতে চলেছে। 
সবই ঠিকঠাক চলছিল, হঠাৎ একদিন সংবাদ মাধ্যমে জানতে পারলাম কেরালার এক ব্যক্তি বিদেশ থেকে এসেছেন এবং তিনি COVID-19 পজেটিভ। তার সাথে সাথে আরও বেশ কিছু ব্যক্তি ওই ব্যক্তির সংস্পর্শে এসেছেন। এবার ভারতের জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়লো। বোড়োরাও ভীষণভাবে আতঙ্কিত হয়ে পড়লো। দেখতে দেখতে সারা ভারতবর্ষেই এই রোগ ভীষণভাবে বায়ুর বেগে ছড়িয়ে পড়তে লাগল। ততদিনে অবশ্য সারা পৃথিবীতে এই রোগ মহামারীর আকার ধারণ করে নিয়েছে। 
সারা পৃথিবীতে এতো মৃত্যু, এতো কান্না আর কখনো কেউ দেখেছে কিনা এটা বলা মুস্কিল। আমাদের ভারতবর্ষে এই মহামারী সম্ভবত ২০২০ মার্চ মাস নাগাদ সূত্রপাত ঘটেছিল। শুরু হল সারা ভারত জুড়ে লকডাউন। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, বাজার-হাট,শহর, গ্রাম, ব্যবসা-বাণিজ্য, দোকানপাট সবকিছুই বন্ধ হয়ে গেল। বাংলাতেও আছড়ে পড়ল এই নতুন রূপে নতুন নামে করোনা মহামারী। 
প্রথম দিকে লকডাউন বিষয়টি সম্বন্ধে আমাদের মধ্যে অধিকাংশই অবগতহীন ছিলাম, কি করতে হবে আর কি করা যাবেনা। তবে আমরা সকলেই এটা বুঝতে পেরেছিলাম যে রোগগ্রস্থ মানুষের সংস্পর্শে কিছুতেই আসা যাবে না। কিন্তু প্রশ্নটা হল এই যে, রোগগ্রস্থ মানুষকে চিনতে পারবো কেমন করে ? এটা তো আর পচা কুমড়ো বা পচা আলু বা বেগুন নয় যে দেখতে পেলেই ছেঁটে ফেলে দেব। 
স্বাস্থ্য দপ্তর থেকে বারবার ঘোষণা করা হয়েছে এই রোগ থেকে বাঁচার উপায়। যেগুলি হল — 
১)     মাস্ক বা মুখারি পড়তে হবে। যাতে নাক অবশ্যই ঢাকা থাকে। 
২)    স্যানেটাইজার দিয়ে ৫-১০ মিনিট পরপর হাত, মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে অথবা সাবান দিয়ে হাত মুখ ধুতে হবে। 
৩)    সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলতে হবে। অর্থাৎ একজন ব্যক্তি আর একজন ব্যক্তির থেকে ৫ থেকে ৭ ফুট দূরত্ব বজায় রাখবেন।
আমরা আজীবন দেখে এসেছি এই মাস্ক সাধারণত ব্যবহার করেন ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা। কিন্তু আমাদেরও যে পরতে হবে এটা, আমরা কল্পনাতেও ভাবতে পারিনি। আমার এক মামা মজা করে বলেই ফেলেন — 
"মানসিনি চিনাইতি হাড়ি।
মোষৌনি মৌখাংনি মুখারি।" 
অর্থাৎ, মামা মজা করে বলেছিলেন, এখন যা অবস্থা হয়েছে মানুষের মুখে মাস্ক যেমন রয়েছে তা দেখে গরুরা হাসছে। গরুদের মুখে যে মুখারি থাকে তেমনি মানুষদেরও সেই অবস্থা হয়েছে।
দ্বিতীয়টি যেটি আছে 'স্যানেটাইজ'। এই কথাটি বোধহয় গ্রামগঞ্জের জনগণের অধিকাংশের কাছেই অজানা শব্দ। আর সাবান কথাটি তো বুঝলাম, কিন্তু স্যানেটাইজ ?     কিন্তু কি যে হল দোকানে দোকানে স্যানিটাইজার উধাও। বাজারে কোথাও পাওয়া যাচ্ছিল না।
আর তৃতীয়টি হল সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। আমার মনে হয় একটি সমাজবদ্ধ জাতির ক্ষেত্রে এইটিই সবচেয়ে কঠিন কাজ। কেননা বোড়ো সমাজ এমন একটি জাতি যার অস্তিত্বই সমাজকে নিয়ে। 
বোড়ো সমাজ আদিমকাল থেকে গোষ্ঠী বা দল-এ বিশ্বাস করে। কিন্তু জীবন তো আগে এবং তার পাশাপাশি সমাজ। তাই বোড়োরা সিদ্ধান্ত নিল তাদের নিজস্ব গ্রামগুলিতে বাইরের অচেনা ব্যক্তিদের প্রবেশ করতে দেবে না। তাই তারা প্রত্যেক গ্রামের প্রবেশ পথগুলিকে বাঁশ লাগিয়ে পথ বন্ধ করে দিল আর তার সাথে প্রত্যেক গেটে একজন বা দু'জন করে পাহারা দেবার জন্য লোক ঠিক করল। একদিন রাতে ঘুমিয়ে আছি, রাত তখন তিনটে হবে, একটা ফোন এল, ফোনটা তুলে দেখি আমার এক দাদার ফোন। তিনি বললেন — 
দাদা — "হ্যাঁরে নাদু, (আমার প্রচলিত নাম) এখ‍্খুনি গরম জল ফুটিয়ে তার মধ্যে চা-পাতা মিশিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে খেয়ে নিস‍্, অবশ্যই কাক‍্ ডাকার আগেই।" 
আমি — 'আমি বললাম তার মানে !'
দাদা — "মানে টানে জিজ্ঞেস করিস না, এটি খেলে নাকি করোনা হওয়ার সম্ভাবনা নেই।"
আমি — আমি তো শুনে হতবাক‍্। 
এত রাতে একটা ফোন এল, আবার এই ধরণের খবর ! সত্যি ভাববো না রঙ্গ রসিকতা বলে এড়িয়ে যাব বুঝতেই পারছিলাম না। হাসিও পাচ্ছিল আবার রাগও হচ্ছিল। এরপর আরও কয়েকটা ফোন কল এলো ঐ একই খবর নিয়ে। এবার আমার স্ত্রী কিছুটা বিশ্বাস করে নিয়ে ঐ পদ্ধতিতে চা বানিয়ে আমার সামনে দিল। আমি অসম্মতি জানালেও স্ত্রীর জোরাজুরিতে খেতে বাধ্য হলাম। সকালে ঘুম থেকে উঠে শুনতে পাই সমাজের সকলেই এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। এমনকি আসাম রাজ্যেও যারা আমাদের আত্মীয়-স্বজনেরা আছেন তাদের কাছেও এই খবর গিয়েছে এবং এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন। এটাকে কুসংস্কার বলবো না সংস্কার বলবো কিছুতেই বুঝতে পারছিলাম না।
এদিকে ভারতের অবস্থা দিনকে দিন খারাপের দিকে চলেছে। করোনা পজেটিভ-এর সংখ্যা হু হু করে বেড়েই চলেছে। বোড়োরা যে একেবারেই এই মহামারীর প্রকোপে আসেনি এটা বলা ভুল হবে। তবে সংখ্যায় কম। এই রোগ এখনো পর্যন্ত শহর বা শহরতলীর মানুষের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। আমাদের গ্রামগুলিতে এখনো অবধি তেমন প্রভাব দেখা যায়নি। শহরাঞ্চলে যে সব বোড়োরা বসবাস করেন তাদের মধ্যেই অধিকাংশ এই COVID-19  রোগের কবলে পড়েছিল। তবে যারা শহর থেকে গ্রামে এসেছিল তাদের দ্বারা গ্রামেও কিছু কিছু মানুষের মধ্যে এই রোগ ছড়িয়েছিল। সরকারী নির্দেশিকা এবং কোভিড বিধি মেনে তারা এখন অনেকেই সুস্থ। 
তবে সরকারি প্রচারের মাধ্যমে বোড়োরাও এখন বুঝতে ও জানতে পেরেছে যে করোনার সাথে লড়াই জেতার একমাত্র উপায় হল মুখে মাস্ক পরা, দূরত্ব বজায় রেখে চলা, বারবার হাত মুখ পরিষ্কার রাখা। এই বিষয়ে বলা প্রয়োজন এই বোড়োরা এই মহাবিপদের সময় আর একটি পন্থা অবলম্বন করেছে, সেটি হল 'চোখ্খা মুলি'-এর সেবন। এটি আসলে বিভিন্ন রকম জ্বর, সর্দি-কাশী হলে গরম জলের সাথে ফুটিয়ে খাওয়া। তাতে করোনা দূর হয়েছিল কিনা বলতে পারবো না তবে জ্বর, সর্দি, কাশি অনেকাংশে কমে গিয়ে মানুষের সুস্থতা লক্ষ্য করা গেছে। এতে অনেক কিছু মেশানো থাকে যদিও এটি কবিরাজি ওষুধ।  এতে লবঙ্গ, এলাচ‍্, পিপ‍্লি, গোলমরিচ, জঙ্গলের আদা বা শোঠ‍্, জঙ্গলি পান পাতার শেকড়, মানিমুনি পাতা, জঙ্গলি বেগুন-এর ফল ও শেকড় ইত্যাদি আরও অনেক কিছু মিশিয়ে তাকে গুঁড়ো করে পাউডার বানিয়ে জলে ফুটিয়ে খেতে হয়। আসলে আমাদের  জ্বর, সর্দি বা কাশি হলে শরীরের ইমিউনিটি পাওয়ার কমিয়ে দিয়ে শরীরকে দুর্বল করে দেয় এবং মুখের স্বাদ, ঘ্রাণ ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। সেই ক্ষেত্রে দারুণ কাজ করে এই 'চোখ্খা মুলি'। 
ছাত্রসমাজ ও করোনা ঃ 
এই মহামারীতে সব চাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে ছাত্র-ছাত্রীরা। দেড় বছর ধরে তারা ঘরে বসে আছে। তাদের জীবনের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে সেটা পরিপূর্ণ করা সত্যিই খুবই কঠিন। সরকার অবশ্য অনলাইন ক্লাস করানোর ব্যবস্থা করেছে। কিন্তু যে সমস্ত গরীব পরিবার দুবেলা দুমুঠো খাবার জোগাড় করতেই হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে, তাদের কাছে একটা দামী অ্যানড্রয়েড মোবাইল ফোন কেনা বড়ই কঠিন ব্যাপার। এতে লক্ষ্য করা যাচ্ছে  অনেক পরিবারের সন্তানরা মোবাইল না পেয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। এই ঘটনা অতীব দুর্ভাগ্যজনক। আবার লক্ষ্য করা যাচ্ছে এই স্কুল বন্ধের কারণে ড্রপ-আউটের সংখ্যা দিন কে দিন বেড়ে চলেছে। অনেক ছাত্ররা তার পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দেওয়ার জন্য দিনমজুরির কাজ করছে। এতে করে শিশু শ্রমিকের সংখ্যাও বেড়ে চলেছে, যা আইনত নিষিদ্ধ। 
তবে একটু স্বস্তির খবর এই যে করোনা প্রতিষেধক টিকা এখন তৈরী হয়ে গেছে। সারা ভারতের জনগণদের এই টিকা দেওয়া হচ্ছে সরকারী ব্যবস্থাপনায়। যার ফলে এই করোনাকে অনেকাংশে প্রতিহত করা যাবে। আমরা সকলেই আশা রাখব যে প্রত্যেকেই যেন খুব তাড়াতাড়ি টিকা পেয়ে যায় এবং এই মহামারী যেন অতিশীঘ্র দূর হয়ে বিশ্বের মানুষ আবার আগের মতোই সুস্থ পরিবেশ এবং প্রকৃতিকে ফিরে পান।