হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা

এতক্ষণ এলোপ্যাথিক চিকিৎসা এবং এলোপ্যাথিক চিকিৎসকদের মতামত সম্পর্কে আলোচনা করেছি, এবার হোমিওপ্যাথিক শাস্ত্রে কি বলেছে সেই বিষয় বলা হচ্ছে।
হোমিওপ্যাথিক শাস্ত্রে বলা হয়েছে, এই রোগের মূল কয়েকটি প্রধান লক্ষণ হলো : হঠাৎ দেহে একাধিক ফোঁড়ার আবির্ভাব, বিনা কারণে হঠাৎ দেহের ওজন কমে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, দেহের বিভিন্ন স্থানে বেদনা হওয়া। অধিক ক্ষুধা ও প্রচুর পিপাসা, ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়া। হোমিওপ্যাথিক বিখ্যাত ডাক্তারগণ বলেন, শুধুমাত্র প্রস্রাব পরীক্ষা করে এই রোগ যে ধরা পড়বে তার কোনও কারণ নেই। এজন্য রক্ত পরীক্ষা করা একান্ত প্রয়োজন। প্রস্রাবে রোগ ধরা না পড়লে সঙ্গে সঙ্গে রক্ত পরীক্ষা করতে হবে।
তবে দুপুরে পূর্ণ খাদ্য গ্রহণের ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পরে প্রস্রাব সংগ্রহ করে পরীক্ষা করলে হয়তো রোগ ধরা পড়তে পারে। যেসব জায়গায় রক্ত পরীক্ষা করার সুযোগ সুবিধা নেই, সেইসব জায়গায় উপরোক্ত ভাবেই প্রস্রাব পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। কিন্তু তাতেও যদি রোগ ধরা না পড়ে এবং রোগ লক্ষণ প্রকাশ পেতে থাকে, তাহলে রক্ত পরীক্ষা করা ছাড়া উপায় নেই।
চিকিৎসা শাস্ত্রে ডায়াবেটিস রোগীদের তিনভাগে ভাগ করা হয়েছে। এদের মধ্যে ১৫ বছর বয়স থেকে ৪০ বছর বয়স্ক রোগীদের সহজে চিকিৎসা করা যায়। • রোগ যদি প্রবল না হয় তাহলে ঐসব রোগীদের অল্প ইনসুলিন বা ঐ জাতীয় রাসটিনন বা ডায়াবিনেজ প্রভৃতি ব্যবহারে রোগ সারে।
কিন্তু ৪০ বছর বয়স থেকে ৫০ বছর বয়স্কদের ক্ষেত্রে রোগীদের চিকিৎসা করা বেশ কঠিন। তার কারণ হলো—এরা মুখে ঔষধ খেলে কাজ হয় না। আবার ইনসুলিন ইঞ্জেকশান দিলে তারা সাময়িক সুস্থ থাকে। তারপর আবার রোগ লক্ষণ প্রকাশ পায়।  সেই জন্য এইসব রোগীদের পক্ষে কোনটি উপযুক্ত বিচার বিবেচনা করে বা পরীক্ষা করে চিকিৎসা করতে হবে।
এইসব রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসকগণ খাদ্য নিয়ন্ত্রণ, সেই সঙ্গে মাঝে মাঝে ইঞ্জেকশান বা ঔষধ ব্যবস্থা করেন। এতে সাময়িক সুস্থবোধ করলেও, পরবর্তী কঠিন রোগগুলির আক্রমণের ভয় দূর হয় না। সেজন্য এক কথায় বলা যায়, এই রোগ একটি দুরারোগ্য ও জটিল অবস্থা আনয়নকারী ভয়াবহ রোগ।
O ডায়াবেটিস ইনসিপিডাসের চিকিৎসা
ডায়াবেটিস ইনসিপিডাস হলে—রোগী বার বার প্রস্রাব করে।, কিন্তু তাতে চিনি (Sugar) সুগার বা গ্লুকোজ (glucose) থাকে না। এই রোগ হলে নিম্নলিখিত ঔষধগুলি লক্ষণ অনুসারে দিতে হবে।
(১) বার বার প্রস্রাব—স্কুইলা। 3x ।
মাত্রা——প্রাতে ও সন্ধ্যায় এক মাত্রা করে। রোগ প্রবল হলে তিনবার দেওয়া যায়। (২) দিনের চেয়ে রাতে বার বার প্রস্রাব লক্ষণে—ক্যালিকার্ব 61
মাত্রা—প্রাতে ও সন্ধ্যায় এক মাত্রা করে দিতে হবে।
(৩) জলপানের পরেই প্রস্রাব ও প্রস্রাবের বেগ প্রভৃতি লক্ষণে—কার্লস্ বাঙ্ 6। মাত্রা—সকালে ও সন্ধ্যায় এক মাত্রা হিসাবে দু'বার দিতে হবে।
(৪) রোগীর অম্ল ও অজীর্ণতা থাকলে—নেট্রাম ফস্ 6x1 মাত্রা—সকালে এক মাত্রা ও সন্ধ্যায় এক মাত্রা।
(৫) মেয়েরা ডায়াবেটিস ইন্সিপিডাসে আক্রান্ত হলে—ইগ্লেসিয়া 3x । মাত্রা—সারাদিনে এক মাত্রা করে দু'বার দিতে হবে।
(৬) বৃদ্ধ বয়সে এটি হলে—কষ্টিকাম 61
মাত্রা—সারাদিনে একমাত্রা করে 2 বার দিতে হবে।
(৭) দিনে বার বার প্রস্রাব এবং রাত্রে বৃদ্ধি প্রভৃতি লক্ষণে—অ্যাসিড ফস 3x, 31
মাত্রা—সারাদিনে একমাত্রা করে তিনবার।
O ডায়াবেটিস মেলিটাস রোগের চিকিৎসা
লক্ষণ—ডায়াবেটিস মেলিটাস হলে, প্রস্রাবের সঙ্গে সুগার বেরিয়ে যায়। (১) প্রস্রাবে চিনির ভাগ বেড়ে গেলে, তাকে দ্রুত কমিয়ে দেবার জন্য—সিজেনিয়াম জাম্বোলিনাম ১x, ৩x, x।
মাত্রা—উপরোক্ত যে কোনও শক্তির ঔষধ প্রাতে ও সন্ধ্যায়, অথবা প্রাতে, দুপুরে ও সন্ধ্যায় দিতে হবে।
(২) রোগীর হাত-পা জ্বালা করলে—সেফালেন্ড্রা ইন্ডিকা মাদার। মাত্রা—৫ থেকে ১০ ফোঁটা জলসহ রোজ ২ বার। অথবা রোগের প্রাবাল্য অনুসারে
তিনবার দিতে হবে।
-নেট্রাম সালফ্ (৩) লিভারের কষ্ট, কালো রংয়ের পায়খানা, গেঁটেবাত প্রভৃতি লক্ষণে—ে 12x1
মাত্রা—প্রত্যহ প্রাতে দুপুরে ও সন্ধ্যায় দিতে হবে।
(৪) নেট্রাম সালফ 30x1
মাত্রা—প্রত্যহ প্রাতে ও সন্ধ্যায় দু'বার প্রযোজ্য। অথবা—
(৫) নেট্রাম সালফ্ 20x
মাত্রা—প্রথম তিনদিন রোজ একবার। তারপর রোগের প্রাবল্য কমলে দু'দিন অন্তর একমাত্রা।
(৬) অত্যন্ত ক্ষুধা, স্নায়বিক দুর্বলতা প্রভৃতি লক্ষণে—কেলিফস 6x,12x1 মাত্রা — 6x সারাদিনে ৩ বার, 12x সারাদিনে দু'বার দিতে হবে। অথবা—
(৭) ন্যাকটিক অ্যাসিড 3, 61
মাত্রা—সারাদিনে ২বার দিতে হবে একমাত্রা করে।
(৮) হঠাৎ রক্তে শর্করা দেখা দিলে—সিকনিকর 6,301 মাত্রা—সারাদিনে ২বার অথবা রোগের প্রাবল্য অনুসারে তিনবার।
(৯) স্নায়বিক দুর্বলতা, বার বার প্রস্রাব, মূত্রগ্রন্থিতে বেদনা, প্রবল পিপাসা, জননতন্ত্রের দুর্বলতা প্রভৃতি লক্ষণে—অ্যাসিড ফস্ফোরিক 3x বা 3। মাত্রা—সারাদিনে ২/৩ মাত্রা প্রযোজ্য।
(১০) জনন যন্ত্রের দুর্বলতা সহ রাত্রে প্রচুর ঘোলাটে পস্রাব লক্ষণে—আর্জেন্ট মেটালিকাম
3, 6, 601
মাত্রা—শক্তি বা ক্রম অনুসারে প্রত্যহ তিনবার থেকে দু'বার প্রযোজ্য। 
(১১) পরিষ্কার ফিকে রঙের প্রস্রাব, তার সঙ্গে ডিমের লালার মত রসক্ষরণ, রোগী ক্রমে
শীর্ণ হয়ে পড়া লক্ষণে— হেনোনিয়াস মাদার 3, 6।
মাত্রা - 5 থেকে 10 ফোঁটা জল সহ প্রত্যহ 2 থেকে তিনবার।
(১২) মূত্রে অধিক শর্করা, অত্যন্ত পিপাসা, কোষ্ঠকাঠিন্য, প্রস্রাবকালে জ্বালা অনুভব করা, সেই সঙ্গে দুর্বলতা প্রভৃতি লক্ষণে—ইউরেনিয়াম নাইট্রিকাম 1x, 31
মাত্রা—প্রত্যহ প্রাতে, দুপুরে ও সন্ধ্যায় প্রয়ো (১৩) বার বার প্রস্রাব করবার ইচ্ছা, প্রস্রাবের বেগ ধারণে অক্ষমতা, প্রস্রাব লাল রঙের তলানি লক্ষণে ক্রিয়োজোট 6, 12, 301
মাত্রা—ক্রম বা শক্তি অনুসারে সারাদিনে ২/৩ বার প্রযোজ্য।
(১৪) বার বার প্রস্রাব, দেহে চুলকানি, অসাড়ভাব, গরমবোধ প্রভৃতি লক্ষণে—কোডেইলাম
1x, 3x1
মাত্রা—প্রত্যহ প্রাতে, দুপুরে ও সন্ধ্যায় তিনবার প্রযোজ্য।
(১৫) অসাড়ে মূত্রত্যাগ, তারপর বেদনা লক্ষণে—নেট্রামমিউর 30, 2001 মাত্রা—প্রত্যহ প্রাতে, মধ্যাহ্নে ও সন্ধ্যায়। তিনবার প্রযোজ্য। এতে কাজ না হলে—
(১৬) সিলিকা 3, 61
মাত্রা—নেট্রাম মিউরে কাজ না হলে ঠিক ঐরূপ মাত্রার সিলিকা দিতে হবে। (১৭) ডায়াবেটিস শোথ থাকলে আসেনিক 6, 301
মাত্রা— সারাদিনে তিনবার প্রযোজ্য। এতে কাজ না হলে—
(১৮) ক্যান্থারিস 3
মাত্রা—সারাদিনে তিনবার প্রযোজ্য। এতে কাজ না হলে—
(১১) রস অ্যারোমেটিক মাদার।
মাত্রা–৫ থেকে ১০ ফোঁটা জলসহ সারাদিনে ২/৩ বার প্রযোজ্য।

সতর্কতা : চিকিৎসার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ পাঞ্ছনীয়।