অত্যন্ত দরিদ্র পরিবারে ১৮৮৯-এর ৩রা ডিসেম্বর ক্ষুদিরামের জন্ম হয় মেদিনীপুর জেলার হাবিবপুরে।পিতা ত্রৈলোক্যনাথ। মাতা লক্ষীদেবী।লক্ষ্মীদেবীর তিন কন্যার (অপরূপা, সরোজিনী ও ননীবালা) পূর্বে দুই পুত্র হয়ে মারা যাওয়ায় তাঁর মনে বদ্ধমূল ধারণা তৈরি হয়, কোনো পুত্র সন্তান তাঁর কাছে বাঁচবে না। তাই পুনরায়, একটি পুত্র-সন্তান জন্মালে অন্ধ সংস্কারের বশবর্তী হয়ে তিনি তাকে তিন মুঠো খুদের বিনিময়ে অন্যের হাতে তুলে দেন। সেই থেকেই নবজাতকের নাম ক্ষুদিরাম।অত্যন্ত অভাব, অবহেলা অনাদর আর অত্যাচারের মধ্যে অন্যত্র ক্ষুদিরামের ছোটবেলা কাটে। মাত্র ছ’বছর বয়সে তাঁর মায়ের মৃত্যু হয়। বাবা মারা যান সাত বছর বয়সে।
একটু বড় হয়ে ক্ষুদিরাম মেদিনীপুরে বড়দি অপরূপার বাড়ীতে এসে আশ্রয় নেন। সেই সময় মেদিনীপুর কলেজিয়েট-স্কুলে ক্লাস ফোরে ভর্তি হন তিনি। ওই স্কুলে পড়াকালেই বিপ্লবী যুগান্তর দলে যোগ দেন ক্ষুদিরাম।
বিপ্লবী সত্যেন বসুর সান্নিধ্যে ১৯০৩-এ ক্ষুদিরাম গুপ্ত- সমিতির মন্ত্র শিষ্য হন।বিলিতি বর্জনে পিকেটিং, স্বদেশী- গ্রন্থ বিক্রয় ও ইংরেজ শাসককে ঘুঁষি মারার অপরাধে তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়। পরে মুক্তি পেয়ে ভয়ংকর অত্যাচারী শাসক কিংসফোর্ডকে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে মজঃফরপুরে চলে আসেন ক্ষুদিরাম।সঙ্গী প্রফুল্ল চাকী।
দু’জনে মজঃফরপুরে এসে এক ধর্মশালায় ওঠেন ছদ্মবেশে।কেবল পোষাকেই নয়, নামও ছদ্ম।ক্ষুদিরাম হলেন দুর্গাদাস সেন। আর প্রফুল্ল দীনেশ সেন। সেদিনটা ছিল ১৯০৮-এর ৩০শে এপ্রিল। সাদা ফিটন গাড়ি করে ক্লাব হাউস থেকে ফিরছে অত্যাচারী কিংসফোর্ড। তখনই দুর্গাদাসের ছোঁড়া বোমাতে সব শেষ।অব্যর্থ লক্ষ্য।কিন্তু হায়! দুর্ভাগ্যবশতঃ সেদিন সে গাড়িতে কিংসফোর্ড নয়,ছিলেন দুই বিদেশিনী।
পুরো পরিকল্পনামতো দু’জন দুদিকে ছুটলেন।দ্রুত সমস্তিপুরের দিকে এগোলেন দুর্গাদাস।দিনে-রাতে হাঁটায় পথশ্রান্তিতে বুক তৃষ্ণায় ফেটে যায়। তাই ওয়াইনি স্টেশনের কাছে এক মুদির দোকানে এলেন জল খেতে। ধরা পড়লেন। সেটা ১৯০৮-এর ১লা মে। বেলা ১টা।
১মাস ৭দিন কারাবাসের পর ৮ই জুন ক্ষুদিরামের বিচার শুরু হল। নিরাপরাধ মিসেস কেনেডি ও তার কন্যাকে হত্যার জন্য ফাঁসি স্থির হল ক্ষুদিরামের।১৯০৮-এর ১১ই আগস্ট। মঙ্গলবার। সময় : প্রত্যুষ।ফাঁসির পূর্ব-মুহূর্তেও ১৯ বছরের কিশোরের বলিষ্ঠ কণ্ঠের উচ্চারণ : বন্দেমাতারম্ ।
পরাধীন দেশের শৃঙ্খল-মোচনের জন্য নির্ভীক সেই তাজা-প্রাণের আত্মোৎসর্গ।এভাবে মৃত্যুর মধ্য দিয়েই দেশবাসীর কাছে ক্ষুদিরাম হয়ে উঠলেন মহা-মৃত্যুঞ্জয়।