বিদেশি শক্তির কবল থেকে ভারতের মুক্তির জন্য আত্মদানকারী শহিদের মধ্যে ভগৎ সিং ছিলেন অন্যতম। শহিদ ভগৎ সিংকে বলা হয় ‛শহিদে আজম’।১৯০৮-এ তিনি জন্মগ্রহণ করেন।তাঁর বীরত্ব,তাঁর জ্ঞান, আত্মবিশ্বাস, দূরদৃষ্টি এবং বাস্তববাদী দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। তাঁর জীবন ও বিপ্লব প্রচেষ্টা বেশি দিনের ছিল না। বয়সও ছিল কম।তবু তিনি নিজেকে প্রস্তুত করে নিয়েছিলেন বিপ্লবের উপযোগী করে।তিনি তাঁর কর্ম,চিন্তা,পড়াশোনার মাধ্যমে তার প্রমাণ রেখে গেছেন।
ভারতের অধিকাংশ ভাববাদী বিপ্লবীদের মধ্যে ভগৎ সিং চিন্তা-ভাবনায় ছিলেন ব্যতিক্রমী।ভগৎ সিং-এর দলই ভারতে জাতীয়তাবাদী বিপ্লবীদের মধ্যে সর্বপ্রথম সমাজতান্ত্রিক আদর্শ গ্রহণ করে।ভাববাদ থেকে ঐতিহাসিক বস্তুবাদের দিকে অগ্রসর হয়।
ভগৎ সিংহই ছিলেন ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’-এর প্রথম ঘোষক।১৯৩০ সালের জানুয়ারিতে আদালতে দাঁড়িয়েই ভগৎ সিং বলেছিলেনঃ ‘আজ লেনিন দিবসে আমরা তাঁদের সকলকেই আমাদের হৃদয়ের উষ্ণ অভিনন্দন পাঠাই,যাঁরা মহান বিপ্লবী লেনিনের নীতি ও আদর্শ সামনে রেখে কিছু না কিছু কাজ করে চলেছেন। রাশিয়ার বুকে এগিয়ে চলা সামাজিক,অর্থনৈতিক পরীক্ষা-নিরীক্ষাগুলির সাফল্য কামনা করি আমরা। আন্তর্জাতিক শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলনের সঙ্গেও আমরা একাত্মতা প্রকাশ করি। সর্বহারার জয় অবধারিত। পুঁজিবাদের ধ্বংস অনিবার্য। সাম্রাজ্যবাদের মৃত্যু আসন্ন।’
বিপ্লবী ভগৎ সিং কেবল ব্রিটিশ শাসন মুক্ত ভারত-চিন্তাই করেন নি। জনগণের জন্য স্বাধীনতার কথাও চিন্তা করেছিলেন। তিনি আদালতে দাঁড়িয়ে উচ্চ কণ্ঠে বলেছিলেন,‘আইনের জন্য মানুষ নয়,মানুষের জন্য আইন।’ ‘স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার।’
দিল্লিতে সংসদ ভবনে বোমা নিক্ষেপের সমর্থনে ইশতেহার ছড়িয়ে দিয়েছিলেন ভগৎ সিং। তাতে লেখা ছিল : ‘বধিরকে শোনাতে হলে উচ্চকণ্ঠের প্রয়োজন।’ ভগৎ সিং ও তাঁর কমরেডরা জানতেন একটা বোমায় ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ ভারত ছেড়ে যাবে না।কিন্তু স্বাধীনতার দাবিটা ওদের কানে পৌঁছবে।আর ভারতবাসী জানবে দেশে বিপ্লবীরা তৈরি হচ্ছে।সেই বিপ্লবীদের রনধ্বনি ‘ইনকিলাব জিন্দাবাদ’। বিপ্লব দীর্ঘজীবী হোক।
১৯৩১-এর ২৩শে মার্চ লাহোর জেলে ভগৎ সিং-এর ফাঁসি হয়।এই ফাঁসি হাসিমুখে বরণ করেন ভগৎ সিং। আর বলেন : ‘এই ফাঁসি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ পুরস্কার।’ মাত্র ২৩ বছর ৫ মাস ২৭ দিনের এই ফুটন্ত যুবককে শতদ্রু নদীর তীরে দাহ করা হয়। আজ সেই স্থানটি ভারতবাসীর কাছে এক পবিত্র তীর্থস্থান। বিপ্লবী ভগৎ সিং-এর স্মরণে, শ্রদ্ধায় ২৩-শে মার্চ সেখানে ‘শহিদ মেলা’ হয়।