জাতির জনক মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি ১৮৬৯-এর ২রা অক্টোবর গুজরাটের পোরবন্দরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা কাবা গান্ধির মতো সত্যবাদী,সাহসী ও মহানুভব ব্যক্তি খুব কমই দেখা যায়। গান্ধিজির মাতার নাম পুতলীবাঈ। মাত্র ১৩ বছর বয়সে গান্ধিজির বিবাহ হয় বৈষ্ণব পরিবারের কন্যা কস্তরবার সঙ্গে।
আজীবন সত্য ও অহিংসার পূজারি মোহনদাস ভারতের স্বাধীনতার জন্য জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে গান্ধিজির অস্ত্র ছিল অভিনব। সত্য ও অহিংসা। হাঁটুর উপর অতিসাধারণ ধুতি,আদুল গা, ক্ষীণতনু মানুষটির আত্মিক শক্তি ছিল বিস্ময়কর। এই আত্মিক শক্তির জোরেই তিনি সাম্রাজ্যবাদী শক্তিকে পরাস্ত করে ভারতের স্বাধীনতা লাভে বিস্ময়কর অবদান রেখে যান। এই মহাত্মার মুখেই মানাতো সেই বজ্রকঠিন আমোঘ বাণী : ‘My life is my message’ (‘আমার জীবনই আমার বাণী’)।
মোহনদাস ১৮৮৭- তে ব্যারিস্টারি পড়তে চলে আসেন বিলেতে । এখানে তিনি ল্যাটিন ও ফরাসি ভাষার পাশাপাশি ইংরেজি ও মার্কিন ভাষাতেও বিশেষ পারদর্শী হয়ে ওঠেন। চার বছর পর ব্যারিস্টারি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে তিনি ফিরে আসেন ভারতে।
দীর্ঘ ২১ বছর ধরে (১৯২১-১৯৪২) স্বাধীনতা অর্জনের জন্য পরাধীন ভারতবাসীকে নির্ভীক নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন তিনি। ১৯৪২-এর ৮ই আগস্ট কংগ্রেসের অধিবেশনে গান্ধিজি আইন-অমান্য আন্দোলন শুরু করার প্রস্তাব দেন। মুক্তিকামী ভারতবাসীকে সে-সময়ে পথের নির্দেশ দেন গান্ধিজি তাঁর ‘করেঙ্গে ইয়ে মরেঙ্গে’ বাণীর মাধ্যমে। আর সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটিশ শক্তিকে বললেন,‘ভারত ছাড়’। এ-সময়ে আবার তাঁকে কারারুদ্ধ করা হয়। এর আগেও সবরমতী জেলে ৬ বছর কারাদণ্ড ভোগ করেন গান্ধিজি।
‘My Experiments with Truth’ নামে একটি অসামান্য আত্মচরিত লিখে যান গান্ধিজি। বিশ্বের অন্যতম প্রধান চিন্তানায়ক হিসেবে স্বীকৃত মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধি জীবৎকালেই ‘মহাত্মা’ হিসেবে পূজিত হতেন। জাতির জনক গান্ধিজি রাজনৈতিক সংগ্রামকে মিশিয়েয়েছিলেন সততা ও নীতিবোধের সঙ্গে।
সাম্প্রদায়িক সংকীর্ণতা,জাতিভেদ প্রথা ইত্যাদির থেকে ভারতকে ঊর্ধ্বে তুলে নিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিলেন গান্ধিজি। তাঁর এই স্বপ্নের সূত্রপাত তরুণ বয়সেই। দক্ষিণ আফ্রিকায়। সেখানে দীর্ঘ ২০ বছরের বসবাসকালে তিনি বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে ক্রমাগত আন্দোলন করেছেন।
মৃত্যুর কিছুদিন পূর্বেও সেই সাম্প্রদায়িক হানাহানি রদ করতে তিনি শেষবারের মতো অনশন করেন। ১৯৪৮-এর ৩০ শে জানুয়ারি সেই সাম্প্রদায়িক শক্তিরই বলি হন তিনি। দিল্লিতে সান্ধ্য প্রার্থনা সভায় যাওয়ার সময় এক আততায়ীর গুলিতে মৃত্যু হয় এই মহাত্মার।